Skip to content

সহযাত্রা: জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার যৌথ প্রচেষ্টা

Published:

সহযাত্রা ইভেন্টটি দেখায় কীভাবে চট্টগ্রামে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইউনিলিভার বাংলাদেশ অনানুষ্ঠানিক পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। ইপসা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে পার্টনারশিপে ও মেটলাইফ বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই উদ্যোগটি প্রশিক্ষণ, সেফটি গিয়ার্, ডিজিটাল পেমেন্ট ও গ্রুপ বিমার মাধ্যমে প্লাস্টিক ভ্যালু চেইনকে আরও নিরাপদ ও ফিউচার-রেডি করছে।

হাস্যোজ্জ্বল পরিচ্ছন্নতা কর্মী

ইউনিলিভার বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, আয় থেকে স্বাস্থ্য এবং মানবাধিকার থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, এই সকল ক্ষেত্রে বৈষম্যের বেশ প্রভাব আছে। আমাদের “সহযাত্রা: কো-ক্রিয়েটিং ইমপ্যাক্ট” ইভেন্টটি এসেছে এই বিশ্বাস থেকে যে, পার্টনারদের সাথে কো-ক্রিয়েশনের মাধ্যমেই এই জায়গাগুলোতে সত্যিকার পরিবর্তন আনা সম্ভব।

গ্রোথ অ্যাকশন প্ল্যান (গ্যাপ) ২০৩০-এর সাসটেইনাবিলিটি পিলার - জলবায়ু, পরিবেশ, প্লাস্টিকস ও জীবনমান উন্নয়ন - এই চারটি ক্ষেত্রে বড় আকারে পরিবর্তন আনা পার্টনারশিপগুলোর অবদানকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এই ইভেন্টে। জীবনমান উন্নয়ন পিলারে চট্টগ্রামে ইয়ং পাওয়ার ইন সোস্যাল এ্যাকশান (ইপসা), চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও মেটলাইফের সাথে কো-ক্রিয়েট করা পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নিয়ে আমাদের উদ্যোগগুলোকে তুলে ধরা হয়েছে।

চ্যালেঞ্জ

ইপসা-র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ড. মোহাম্মদ আরিফুর রহমান ‘সহযাত্রা’ ইভেন্টে বলেন: “সারাদেশের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা অনিশ্চিত আয়ের মধ্যে থাকেন, কারণ এটি কোনো আনুষ্ঠানিক চাকরি না। তাই সমাজেও তারা প্রাপ্য সম্মান পান না। কোনো কারণে অসুস্থ হলে কয়েকদিন কাজ বন্ধ থাকে, আর সেই সময় কোনো আয় থাকে না। তাই আমাদের এমন একটি সমাধান খুঁজতে হয়েছে, যা তাদের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে।”

বিশ্বজুড়ে প্রায় ২ কোটি অনানুষ্ঠানিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য সংগ্রহ, বাছাই ও বিক্রির মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মেরুদণ্ড হয়ে আছেন। তারা প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইন থেকে কাজ করছেন - যা বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত হুমকি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বেশির ভাগ পরিচ্ছন্নতা কর্মী ফাইনান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি, সুরক্ষা সামগ্রী ও স্বাস্থ্যসেবা ছাড়া অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করছেন। বাংলাদেশে, বিশেষ করে চট্টগ্রামের মতো শহরে, এই অদৃশ্য যোদ্ধারা দিনে ২ ডলারেরও কম আয় করেন। কোনো প্রকার অসুস্থতা বা দুর্ঘটনা মানে কয়েকদিন কাজ বন্ধ, আয় হারানো, এমনকি সন্তানের শিক্ষাও ঝুঁকিতে পড়ে।

সামাজিক স্বীকৃতি ও সুরক্ষ্যার অভাবে তারা অনেকদিন ধরেই দারিদ্র্যের চক্রে আটকে আছেন; সামাজিক নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত, পলিসিমেকিং-এর সময় অবহেলিত, আর সমাজের দৃষ্টিতে অবজ্ঞার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সত্যিকারের সোশ্যালি-জাস্ট প্লাস্টিক সার্কুলার ইকোনমি গড়তে হলে, এই কাজের মূল চালিকাশক্তি - এই মানুষগুলোকে, পাশে রাখতেই হবে।

পিপিই পরা পরিচ্ছন্নতা কর্মী

একটি কো-ক্রিয়েটেড সল্যুশন

ইউনিলিভার বাংলাদেশ ২০২২ সালে ইপসা ও সিসিসি-এর সাথে পার্টনারশিপের মাধ্যমে চট্টগ্রামে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উদ্যোগটি চালু করে। এই উদ্যোগের আওতায় আমরা কয়েকটি ইন্টারভেনশন ডিজাইন করেছি এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছি।

গ্রাসরুটস মোবালাইজেশনের জন্য ইপসা ও দীর্ঘমেয়াদি সাসটেইনাবিলিটির জন্য সিসিসি-এর সাথে মিলে আমরা এমন একটি মডেল চালু করেছি, যেখানে প্লাস্টিক ভ্যালু চেইনের কেন্দ্রে মর্যাদা, নিরাপত্তা ও সুরক্ষাকে রাখা হয়েছে।

এই উদ্যোগ চারটি মূল ক্ষেত্রে ফোকাস করে:

  • স্কিল ও সেইফটি: ৩,০০০-এর বেশি পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিরাপদভাবে বর্জ্য বাছাই ও প্লাস্টিক রিসাইক্লিং নিয়ে স্ট্রাকচারড ট্রেনিং পেয়েছেন। তাদের মাঝে ২,০০০-এর বেশি পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) বিতরণ করা হয়েছে, যার ফলে সেইফটি কাভারেজ ৫০% পর্যন্ত বেড়েছে। আজ ৯১% পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়মিত পিপিই ব্যবহার করেন, যা এই উদ্যোগের আগে ছিল মাত্র ২৯%।
  • আয় ও স্ট্যাবিলিটি: পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে ইনসেন্টিভ-নির্ভর পেমেন্ট করা হয়, যা সম্পূর্ণ ডিজিটাল, এবং ফলে ট্রেস করা সম্ভব। মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ব্যবহারের কারণে ১০০% ট্রান্সপারেন্সি ও প্রেডিক্টিবিলিটি এসেছে, একই সঙ্গে বেড়েছে তাদের ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন।
  • স্বীকৃতি ও মর্যাদা: কাজের জন্য নিয়মিত স্বিকৃতী র্ড ও আইডি ভ্যালিডেশনের কারণে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা আর অদৃশ্য নন। তারা শহরের পরিবেশ রক্ষায় স্বীকৃতি পাচ্ছেন, ফলে তাদের ব্যাপারে মানুষের ধারণা বদলে যাচ্ছে।
  • সামাজিক সুরক্ষা: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমরা অনানুষ্ঠানিক পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য বাংলাদেশের প্রথম কর্পোরেট-ফান্ডেড গ্রুপ বিমা ব্যবস্থা চালু করেছি।

বিমা: এক নতুন ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা

প্রথমবারের মতো পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এমন একটি আনুষ্ঠানিক বিমা স্কিম পাচ্ছেন, যা ছোটখাটো আঘাত থেকে আয়ের ক্ষতির মতো বিভিন্ন ঝুঁকির বিপরীতে আর্থিক নিরাপত্তা দেয়, যার মধ্যে জীবনবিমাও আছে।

এ পর্যন্ত ১,৮২৭ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী এই প্রোগ্রামের আওতায় এসেছেন। যারা আগে স্বাস্থ্যসেবা বা সামাজিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তাদের জন্য এটি ইতিবাচক একটি পরিবর্তন। বিমা শুধু আর্থিক সুরক্ষা না, মানসিক শান্তিও দেয়। এই উদ্যোগটি নিশ্চিত করছে, একটি দুর্ঘটনার ফলে যেন কেউ ঋণ ও হতাশার চক্রে না পড়ে।

সহযাত্রা ইভেন্টে মেটলাইফ বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চিফ কর্পোরেট বিজনেস অফিসার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, “ঘাটতিটি শুধুমাত্র আর্থিক ছিল না, ছিল মর্যাদায়, ছিল নিরাপত্তায়, ছিল আশায়। এই পার্টনারশিপের মাধ্যমে আমরা সেই ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করছি।”

ইমপ্যাক্ট ও স্বীকৃতি

এ পর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফল বেশ আশাজনক:

  • ৯২% কর্মী আয় বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন; তাঁদের মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশের আয় বেশ বেড়েছে।
  • ৯৪% কর্মী কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন; ৯৯% এই উদ্যোগের ডিজাইন নিয়ে সন্তুষ্ট।
  • চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ডেই এই মডেল চালু হয়েছে, যার ফলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভ্যালু চেইনে ১২,০০০+ মানুষ যুক্ত হয়েছে।
  • সামাজিক সুরক্ষা ও ইকোনমিক ইনসেন্টিভ নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই উদ্যোগ ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ’-কে আরও নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ জীবিকায় পরিণত করেছে।

আগামী দিনের ভাবনা

‘পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জীবনমান উন্নয়ন উদ্যোগ’ কোনো এককালীন প্রকল্প না। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা, যা মার্কেট লজিক, কমিউনিটি ওনারশিপ ও ইনস্টিটিউশনাল অ্যাকাউন্টিবিলিটির ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। ৪১টি ওয়ার্ডেই ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট কমিটি শক্তিশালী করার মাধ্যমে আমরা মডেলটিকে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে পেরেছি। সুরক্ষা সামগ্রী, প্রশিক্ষণ ও বিমার মাধ্যমে আমরা একটি প্রফেশনালিজম ও কেয়ারের কালচার তৈরি করেছি।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ইপসা ও সিসিসি-এর সঙ্গে কো-ক্রিয়েশন এবং মেটলাইফের সহযোগিতায় আমরা প্রমাণ করেছি যে এই ধরনের পার্টনারশিপের ফলে সবচেয়ে অবহেলিত জীবনমানও হয়ে উঠতে পারে মর্যাদাপূর্ণ, নিরাপদ ও ফিউচার-রেডি প্রফেশন।

Back to top